আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপায় : নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন আপনার জীবণেরই একটি উপপাদ্যের মতন। যা এমনিতেই আসে না। বরং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এটিও ক্রমশ বাড়তে থাকে। তবে নিজের প্রতি আস্হা না থাকলে। ব্যর্থতার মাঝে জীবণকে অভিশপ্ত মনে হয়। তবে হ্যাঁ! আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপায় জানতে আপনি সঠিক ব্লগেই এসেছেন।
একজন আত্মবিশ্বাসী, তার জীবনের প্রতিটি মূহুর্তেই ভালো কিছু করে।
Content Summary
আত্মবিশ্বাস কাকে বলে?
আত্মবিশ্বাস হল, মনের স্থিরতা যেটা মানুষকে র্নিদিষ্ট লক্ষ্য র্অজন করতে সাহায্য করে। জীবনে যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন সামনে চলে আসে। ঠিক তখনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাস। নিজের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে। জীবনে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।
কেন আত্মবিশ্বাসী হবেন?
** কারণ, আত্মবিশ্বাস থাকলে। আপনার ক্ষমতার বাইরের অনেক কাজও খুব সহজে করে নিতে পারবেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী না হলে আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকা কাজগুলোও আপনার কাছে অসম্ভব মনে হবে।
মনে রাখবেন। আমাদের আত্মবিশ্বাস যতটা থাকে। আমাদের ক্ষমতাও ততটাই থাকে। সুতরাং, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেলে। আপনার কর্ম-ক্ষমতা ও স্পৃহা বৃদ্ধি পাবে।
** কোন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন। “আত্মবিশ্বাস গভীর জঙ্গলে ছোট্ট টর্চের মত। এতে পুরোটা আলোকিত হয়না। কিন্তু যথেষ্ট আলো দেয়, যাতে নির্বিঘ্নে নিরাপদে পৌঁছানো যায়।
আত্নবিশ্বাসী হওয়ার উক্তি
এই দুইটি কথার ফলাফল স্বরুপ। আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত। এই সুন্দর পৃথিবীতে সফলভাবে বেঁচে থাকতে হলে। “ আত্মবিশ্বাসী” হতেই হবে। এবং হওয়া প্রয়োজন। এবার চলুন, আত্নবিশ্বাসী হওয়ার উপায় জানি:
আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপায়

জগৎ খ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী নিউটন একটা কথা বলেছিলেন। “আপনি যদি নিজে থেকে কিছুই না বদলান। তাহলে কোনদিনও কিছুই বদলাবে না।” এই উক্তিটির মধ্যেই আপনি আত্নবিশ্বাসী হওয়ার উপায় বুঝে নিতে পারেন।
আপনার জীবণ কেউ বদলাতে পারবেনা। এমনকি আমার এই লেখাটি যদি হাজারো বার পাঠ করেন। এবং প্রত্যেকবারই অনুপ্রাণিত হন। তবুও এই লেখাটি আপনার জীবণকে বদলাতে পারবে না। যদি না আপনি নিজে থেকে বদলান।
তবে নিজেকে বদলাতে গিয়ে। এমন কোন কাজ করতে যাবেন না। যেটা আপনার ও আপনার চারপাশের মানুষের জন্য সঠিক নয়। বরং আপনি ঠিক সেই কাজটিই করুন। যেটা আপনার এবং অন্যদের সবার জন্যই ভালো।
পড়ুন
ব্যর্থতা থেকে সফলতা পাওয়ার উপায়
এবং যেই কাজটি করলে। আপনার জীবণের মূল্য অনেকাংশে বাড়তে থাকবে। সুশীল সমাজে আপনি মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারবেন। সবার কাছ থেকে ভালোবাসা এবং সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবেন।
আপনার প্রতি মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য। এবং তাদের কাছে প্রিয় হওয়ার জন্য। আপনি নিজেকে আগে সৎ বলে প্রমাণিত করুন। অর্থাৎ আগে নিজে সৎ হন। এর উদাহরণ হিসেবে বাস্তব একটি ঘটনা বলতে হচ্ছে।
আমাদের পাশের বাড়ির এক চাচা। তিনি তার ছেলেকে হঠাৎ একদিন সিগারেট খেতে দেখে। এবং তাকে খুব শাষণ করে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো: তার কয়েকদিন পর আমি স্বয়ং ঐ চাচাকে সিগারেট খেতে দেখেছি।
সুতরাং আপনি আগে নিজে সৎ হন। তারপর বাকিদেরকে সৎ হওয়ার উপদেশ দিন।
আত্মবিশ্বাস অর্জনের আরেকটি বড় বাধা: পাছে লোকে কিছু বলে।
এটি স্ববিশ্বাসের একটি বড় প্রতিবন্ধকতা
আপনি যখন কোন উদ্যোগ নিতে চাইবেন। এবং সামনের দিকে এগোতে থাকবেন। তখন একশ্রেণির বিরোধী পক্ষ। আপনাকে হেয় করার জন্য কটু প্রশ্ন ছুঁড়বে। সমালোচনা, সন্দেহ করবে। সেক্ষেত্রে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
পিছে লোকে কিছু বলে-এই নীতিতে কান না দিয়ে এগিয়ে চলুন। তাতে আপনার আত্নবিশ্বাস আরও বাড়বে। সবসময় মনে রাখবেন, আপনি ভাল কিছু করছেন বলেই। লোকেরা আপনাকে নিয়ে এত কিছু বলাবলি করছে। তাই পিছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলুন। সফলতা আসবেই।
আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপায় ও একটি সুন্দর কৌশল
কোন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। সমালোচনা কারীদের ব্যাপারে তার শিষ্যদের বলেছিলেনঃ
“রাস্তায় ঘেউ ঘেউ করা সব কুকুরকে তুমি
আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপায় ও কৌশল
যদি ঢিল মারতে যাও। তাহলে তুমি তোমার গন্তব্যেই পৌঁছাতে পারবে না”
সুতরাং পিছনে লোকেরা আপনাকে নিয়ে কি বলাবলি করছে। সেটার দিকে খেয়াল করবেন না। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রেখে, নিজের প্রতি আস্থা রাখুন।
নিজের প্রতি বিশ্বাস অর্জনের জন্য যা করবেন:
- মনের জোর বাড়ান।
- স্মার্ট হতে শিখুন।
- হতাশামুক্ত থাকুন।
- সাহস বৃদ্ধি করুন।
- নেতিবাচক বা নেগেটিভ চিন্তা করবেন না।
- আবেগ কমান।
কখনো কখনো এমন হয়। যখন কোন কিছুই আপনার মনমতো হয় না। সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
তখন সমালোচনাকারী ও তিরস্কারকারীরা। আপনার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে তিরস্কার করবে। আপনাকে ভৎর্সনা করবে।
আপনি হয়তো তখন নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন। কিন্তু আপনাকে আবার আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
এবং পুনরায় নতুন উদ্দ্যমে প্রচেষ্টা বজায় রাখতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।
সেই মূহুর্তে আপনার অর্ন্তসত্ত্বাকে (মন) এভাবে বুঝাবেন:
“আমি করি, কারণ আমি পারি,
আমি পারি, কারণ আমি পারতে চাই।
আমি পারতে চাই, কারণ তুমি বলেছিলে:-
“আমি এটা করতে পারবো না”
“নিজেকে কখনও ছোট করে দেখবেন না। তাহলে আপনার নিজের আত্মাই মারা যাবে। আত্মা মরে গেলে মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়।
আর স্বপ্ন ছাড়া মানুষ কখনও বেঁচে থাকতে পারে না”। সুতরাং স্বপ্ন দেখতে শিখুন। সফল হওয়ার উপায় খুঁজে বের করুন।
এবং সব সময় সেরাটাই হতে চাইবেন।
আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার উপায়

২) নিজের ভূলগুলো শুধরে নিন। এ জন্য প্রথমে নিজের ভূলগুলোকে একটি নোট করুন।
এবং ভাবুন কোন দিকগুলো পরিবর্তন করা যায় বা কোন ভূলগুলো শুধরানো যায়। সেগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
৩) অতীতে অর্জন করা ভালো অবদানগুলোর কথা মনে করুন। এবং মনে প্রশান্তি অনুভব করতে করতে ভাবুন।
এবং এইভাবে প্রতিজ্ঞ হন যে, তখন পেরেছিলাম। এখনও পারবো। আমি পারি। আমাকে পারতেই হবে।
৪) ইতিবাচক চিন্তা ও বিশ্বাসে আস্থা রাখুন: অনেক সময় কোন খারাপ কিছু ঘটলেই। নিজেকে খুব একা মনে হয়।
তখন হয়তো নিজের চিন্তা ভাবনা ও বিশ্বাসের উপর আস্থা হারিয়ে যায়। তবে, আপনার ভিতরও যোগ্যতা আছে।
এই মানসিকতা নিজের ভিতর তৈরি করতে শিখুন। আর এভাবেই ইতিবাচক চিন্তা করুন। এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রেখে আপনার প্রতি আশ্বাস রাখুন।
আপনার হয়তোবা এমন অনেক গুণ আছে।
৫) লক্ষ্য ও প্রত্যাশা স্থির করুন: আপনি আপনার জীবণে কি হতে চান। এবং সেজন্য আপনাকে কি কি করা লাগতে পারে।
তার একটা তালিকা তৈরি করুন। এবং জীবণের এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য নিজের প্রতি দৃড় বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন।
৬) সুযোগ গ্রহণ করুন: অন্যরা কি ভাবছে, কি বলছে, কি করছে। তা আপনি কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না।
একথাটি একদম ঠিক। কিন্তু আপনি তো নিজেকে চাইলেই নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
তাই সবকিছুর মোকাবেলা করার জন্য নিজেকে শক্তিশালী করে তুলুন। এবং নতুন কিছু করার জন্য সুযোগ গ্রহণ করুন।
কারণ এই সুযোগটিই হয়তো একদিন। আপনাকে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।
৭) নিজের খেয়াল রাখুন: নিজেকে গড়ে তুলতে ও দক্ষ করে তুলতে নিজের প্রতি খেয়াল রাখা অনেক জরুরী।
আত্মবিশ্বাস অর্জনের উক্তিগুলো, বদলে দিতে পারে আপনার জীবণ
কারণ আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে যতো বেশি সুস্থ থাকবেন। ততো বেশি আপনার প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
নিজের দেখ-ভাল করলে। ভালো কিছু করারও বিশ্বাস বাড়ে। এবং আগ্রহও বাড়ে।
৮) আপনার যতটুকু সামর্থ্য আছে। ততটুকুতে খুশি থাকুন। কারণ, অনেক কিছু পাওয়ার লোভ। মানুষের মনের প্রশান্তি ও ইতিবাচক আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।
নিজেকে নিখুঁত বানানোর দরকার নেই। নিজের যা কিছু সামর্থ আছে। তা নিয়েই খুশি থাকুন।
তাই নিয়েই খুশি থাকুন। তাহলেই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আর হ্যাঁ! আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম-অহংকার এক বিষয় নয়। সুতরাং কখনোও আত্ম-অহংকারী হবেন না। কেননা, আত্মহংকার ক্যারিয়ার ও জীবণের পতনের মূল।
৯) জীবণে সফলতা ও ব্যর্থতার উত্থান পতন আছেই। কিন্তু ব্যার্থ হলে, আবার ঘুরে দাড়ান। যতই দুঃখ্য পান না কেন! সামলে নিবেন।
১০) মানুষ ভূলের উর্ধ্বে নয়। তাই ভূল করলে, থেমে থাকবেন না।
বরং আগামীর জন্য শিক্ষা গ্রহণ করবেন। এবং সতর্কতার সাথে এগিয়ে যাবেন।
১১) কোন মানুষই নিখুঁত নয়। সুতরাং আপনার কাছে বাস্তবে যেরকমটা আছে।
সেটা নিয়েই খুশি থাকুন। এবং আল্লাহ তায়ালার প্রতি শুকরিয়া আদায় করুন।
===========================
জীবণে যতই প্রতিকূলতা আসুক। আত্মবিশ্বাস ও সৎ সাহস থাকলে। সব প্রতিকূলতাকেই নিজের অনুকূলে আনা যায়।
===========================
** আত্মবিশ্বাস সাধারণত সাফল্যের সাথে আসে। কিন্তু সাফল্য তাদেরকেই ধরা দেয়। যারা সফলভাবে আত্মবিশ্বাসী।
সাফল্য অর্জনের জন্য। বিখ্যাত ইংরেজি সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছিলেনঃ–
অন্যের থেকে বেশী জানুন। এবং অন্যের চেয়ে বেশী কাজ করুন। কিন্তু অন্যের থেকে কম আশা করবেন।
পড়ুন: সফল হওয়ার নিশ্চিত উপায়।
পড়তে পারেন
** সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে সবকিছু দেন। যারা তার উপর বিশ্বাস রাখে।
কিন্তু আপনাকে কিছু দেননি। কারণ সৃষ্টিকর্তার আপনার উপর বিশ্বাস আছে।
একটা পাখি কখনো উঁচু ডালে বসতে ভয় পায় না। কারণ সে জানে যে, যতই বিপদ হোক। সে পড়ে যাবে না। কারণ, তার কাছে ওড়ার আত্মবিশ্বাস আছে। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।
পরিশেষে, “আমি তো এটা চাইলেই করতে পারব”। এটা ভেবে কখনও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না।
আর এতে কাজটাই কখনো করা হবে না। বরং মনের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজটা শুরু করুন।
মনে রাখবেন। একটা সঠিক সিদ্ধান্ত, আপনার আত্মবিশ্বাসকে দ্বিগুন করে দেয়। আর একটা ভুল সিদ্ধান্ত, আপনার অভিজ্ঞতাকে দ্বিগুণ করে দেয়।
সুতরাং আপনি যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন। চিন্তা করবেন না। নিজের প্রতি সর্বদা বিশ্বাস রাখবেন।
পুরো লেখাটি পড়ার পরও। যদি কোন কিছু জানার থাকে। তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। আপনার সুস্থ কামনা করে, শেষ করছি। ধন্যবাদ।।