অনেকেই কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে ইচ্ছা পোষণ করে। কারণ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ক্যারিয়ার গড়তে পারলে। জীবণ অনেকটাই স্বার্থক ও স্বচ্ছল হয়। এবং অনেক ক্ষেত্রে কর্ম জীবণে কাঙ্খিত প্রাপ্যের চেয়েও বেশি কিছু পাওয়া যায়।
কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হলেও সত্যি যে, অধিকাংশরাই জানে না: নির্দিষ্টভাবে ঠিক কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিবে এবং কোন বিষয়ের উপর ক্যারিয়ার গড়বে।
তাই আমার এই লেখায়, আমি প্রচলিত মানদন্ড অনুযায়ী বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর যথাসম্ভব আলোচনা করবো।
যাতে করে, কম্পিউটার শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। যে, সে ঠিক কোন বিষয়ের উপর ক্যারিয়ার গড়বে? সেই সাথে: কোন বিষয়ে চাকরি করলে গড়ে মাসিক বেতন কত? এই সমস্ত বিষয়ে মোটামোটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। তবে আপাতত, কমন এবং সর্ব প্রচলিত বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করছি।
Content Summary
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ক্যারিয়ার গড়ুন
আমরা অনেকেই জানি। “কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং” এবং “কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং”। দুইটি আলাদা বিভাগ হলেও। উভয় বিভাগের মধ্যে অনেকটা মিলও রয়েছে।
এবং আপনি এই দু’টি বিভাগের যেকোন একটিতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। কিন্তু এই বিষয়টাও আপনার ভবিষ্যত নিয়ে লক্ষ্য ও চিন্তার সূক্ষতা এবং সখ্যতার উপর নির্ভর করে।
তবে যাই হোক। উভয় বিভাগেই পরিশেষে প্রধানত দুইটি বিষয়ে বিভক্ত করা হয়। আর এই দুইটি প্রধান বিষয় হলো: হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার।
হার্ডওয়্যার
একজন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টস/অংশ যেমন: মাদারবোর্ড, প্রসেসর, হার্ডডিস্ক,র্যাম
ও বিভিন্ন ড্রাইভারসহ এর বাহ্যিক অংশ নিয়ে গবেষণা করে: কম্পিউটারের ক্রমশ উন্নয়ন কাজ করে থাকে।
U.S (United Sate of America) এ একজন হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন বাৎসরিক হিসেবে।
মাসিক গড়ে:– ৮০ লক্ষ্য টাকা। আর এই সেক্টরে বাংলাদেশে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন ৪৫,০০০ – ৮,৫০,০০০ টাকা।
সফটওয়্যার
একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কম্পিউটারের অভ্যন্তরিণ বিভিন্ন সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামের মাধ্যমে। ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, মেইনটেনেন্সসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকে। যেমন: গ্রাফিক্স ডিজাইন, অটোকেড এর মাধ্যমে থ্রিডি নকশা তৈরি, প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপস, ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।
U.S এ একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন গড়ে: ৭০ – ৮০ লক্ষ্য টাকা। বাংলাদেশে ১৫,০০০ থেকে ১২,০০,০০০ টাকা।
হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
কম্পিউটারের প্রত্যেকটি বাহ্যিক যন্ত্রাংশগুলোকে এক একটি হার্ডওয়্যার বলা হয়। এবং একাধিক হার্ডওয়্যার এর সমন্বয়ে। একটি ডিভাইস তৈরি করা হয়।
যেখানে নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম সংক্রান্ত প্রোগ্রামিং অর্থাৎ সফটওয়্যার এর ইনস্টলেশনের মাধ্যমে একটি ব্যবহারযোগ্য কম্পিউটার তৈরি করা হয়।
ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী। আজ অব্দী বিভিন্ন কোম্পানী, বহু রকমের হার্ডওয়্যার তৈরি করছে। তবে, এই হার্ডওয়্যার গুলোরও বেসিক এবং প্রধান কয়েকটি অংশ আছে। যেগুলো ছাড়া কম্পিউটারকে পূর্ণভাবে সচল করা সম্ভব নয়।
প্রধানত হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদেরকে চার ভাগে ভাগ করা হয়ঃ—
১) Input Devices:
মাউস, কি-বোর্ড, টাচপেড, টাচস্ক্রিন, গ্যামপেড, জয়স্টিক, মাইক্রোফোন, ওয়েব ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা,টিভি-কার্ড,
স্ক্যানার ইত্যাদির উপর একপক্ষীয় গবেষণা করলে, তাকে Input Devices এর Hardware Engineer বলে।
2) Output Devices:
মনিটর, প্রজেক্টর, স্পিকার, ওয়ারলেস, ব্লুটোথ ডিভাইস ইত্যাদির উপর গবেষণা করলে, তাকে Output Devices এর Hardware Engineer বলে।
3) Processing Devices:
প্রসেসর, মাদারবোর্ড, মাদারবোর্ড সার্কিটের বিভিন্ন চিপস ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করলে, তাকে প্রসেসিং ডিভাইসের হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলে।
৪) Memory/Storage Devices:
র্যাম, সিপিইউ, এপিইউ, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করলে, তাকে Memory Devices এর হার্ডওয়্যার-Engineer বলে।
এছাড়াও অসংখ্য হার্ডওয়্যার ডিভাইস আছে, যা উক্ত চার ক্যাটাগরির অভ্যন্তরীণভুক্ত।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
সাধারণত কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার গুলোকে একটিভ বা সচল করতে। এবং যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে। যেকোন উপায়ে, নির্দিষ্ট কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমে। কোডিং করে যে নির্দেশ প্রদান করা হয়। তাকে “সফটওয়্যার” বলে।
হার্ডওয়্যার এর সমন্বয়ে, ডিজিটাল ডিভাইস তৈরির পর। সচল করার জন্য। সর্বপ্রথম ও প্রধান যেকোন সফটওয়্যার আমরা ব্যবহার করি। তাকে অপারেটিং সিস্টেম বলে।
OS এর পূর্ণরুপ: Operating System
অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া: কম্পিউটার সচল করা ও ডিভাইসকে চালু করা সম্ভব না। কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেম হলো: উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাক, অ্যান্ড্রয়েড এবং উবুন্টু ইত্যাদি।
প্রত্যেকটি অপারেটিং সিস্টেম এর জন্য ডেভেলপমেন্ট অপশন রয়েছে। যেখানে আপনিও কোডিং এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জন্য।
নতুন কোন সেবা ও পূর্বে কৃত কোডিং এর ভূল সংশোধন করে। লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
তাছাড়া, আপনার কাজের দক্ষতা যদি খুবই ভালো ও প্রশংসাযোগ্য হয়। তাহলে উইন্ডোজ, অ্যাপল ও গুগল এর মতো,
বিখ্যাত কোম্পানীগুলোতে খুবই সম্মানজনক জব পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
** এছাড়াও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ সাধারণত বহু বিষয়ের উপর ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
তাই নির্দিষ্ট করে প্রধান/মৌলিক বিষয়কে নির্বাচন করা তুলনামূলক কষ্ট-সাধ্য ব্যাপার।
তারপরেও এখানে কয়েকটি প্রফেশনের কথা উল্লেখ করা হলোঃ—
১) গ্রাফিক্স ডিজাইন:
বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে কোন ইমেজ, ফটো বা অঙ্কনচিত্র ডিজাইন করা হয়। এর মাধ্যমে যে কোন কোম্পানি বা পণ্যের লোগো, পোষ্টার, ব্যানার, এ্যাডস বা যে কোন ধরণের ডিজাইন করা হয়।
২) মাল্টিমিডিয়া:
ভিডিও, অডিও ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয়। এর মাধ্যমে টিউটোরিয়াল ভিডিও, গান, নাটক, সিনেমা তৈরি এবং এডিট করা হয়।
৩) ওয়েব ডিজাইন:
বিভিন্ন ওয়েব সাইটের পেজ ডিজাইন করা হয়।
৪) ওয়েব ডেভেলপমেন্ট:
ওয়েব সাইটের অভ্যন্তরীণ ডেভেলপ ও নিয়ন্ত্রন করা হয়।
৫) গ্যাম ডেভেলপমেন্ট:
বিভিন্ন গ্যাম তৈরি করা হয়। ও ডেভেলপ করা হয়।
এছাড়াও বর্তমানে বহুল প্রচলিত কিছু বিষয় নিচে দেওয়া হলো, যেগুলো ক্যারিয়ারে সম্মান এবং অর্থ দুনোটাই পাওয়া যায়।
১) আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স:
মেশিন লানিং অর্থাৎ, রোবট নির্মাণ, মেইনটেনেন্স ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা।
২) প্রোগ্রামার: বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন: C, C++, JAVA, PHP ইত্যাদি নিয়ে রিসার্চ করা হয়।
৩) অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট: বিভিন্ন স্মার্টফোন যেমন: আই-ফোন, ব্লাকবেরি, এন্ড্রয়েড ইত্যাদিতে বিভিন্ন সুবিধা ও পরিচালনার জন্য অ্যাপস তৈরি করা হয়।
কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ আরো কয়েকটি প্রফেশন শব্দ
কম্পিউটার এর উপর ক্যারিয়ার গঠণের জন্য। সংক্ষিপ্তভাবে আরো কয়েকটি প্রফেশন শব্দের সাথে পরিচিত হই।
এখান থেকে আপনি নির্বাচন করুন যে, আপনি ভবিষ্যতে ঠিক কোন বিষয়ের উপর ক্যারিয়ার গড়তে চান।

১) গ্রাফিক্স ডিজাইন।
২) মাল্টি মিডিয়া।
৩) এনিমেশন/কার্টুন এনিমেশনঃ- এর মাধ্যমে বিভিন্ন কার্টুন তৈরি করা হয়। যেমন: মিনার কার্টুন, মটো-পাটলু,
নাট-বল্টু, টম এন্ড জেরি, পাপাইসহ বিভিন্ন ধরণের কার্টুন। এগুলো এনিমেশন সিস্টেমে নির্মিত।
৪) ওয়েব ডিজাইন।
৫) ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।
৬) অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট।
৭) ডাটা মেইনটেনেন্সঃ- আমাদের পারসোনাল কম্পিউটারের মতো সার্ভার কম্পিউটারেরও ডাটাবেজ থাকে, যেখানে অসংখ্য তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তদারকি করে থাকে। একজন ডাটা মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক বেতন: সাধারণত ৪০,০০০ – ২০০,০০০ টাকা।
৮) আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সঃ- ডিজিটাল ডিভাইস বলতেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর ব্যবহার অনস্বীকার্য।
এবং জাকির ডট মি তেও পড়তে পারেন।
৯) SEO এক্সপার্টঃ- এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক্সপার্ট ইন্টারনেট এর সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রচার ও মার্কেটিং করে থাকে।
এবং যে কোন প্রোডাক্ট/পণ্যকে রেঙ্কিং করে থাকে। এদের গড় মাসিক বেতন: ৩০০০০ – ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত।
কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ কাজের সুযোগ
কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ শিক্ষাকালীন থেকেই। আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, পার্ট টাইম জবের সুযোগ রয়েছে।
এবং কর্ম-জীবণে তো নিশ্চিত ক্যারিয়ার গঠণের সুযোগ রয়েছেই।
এছাড়াও অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং করে চাকরির চেয়েও অনেক বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
অনলাইনে আয়ের জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
পরিশেষে, একটা কথা না বললেই নয়। বিশ্বের সকল দেশেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বিশেষ করে আমাদের দেশে এই সেক্টরে প্রচুর জনবলের চাহিদা বাড়ছে। এবং প্রতি বছরই শুধুমাত্র আমাদের দেশ থেকে।
হাজার হাজার কম্পিউটার সাইন্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী পাশ করছে। কিন্তু যে পরিমাণ ইঞ্জিনিয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে বের হচ্ছে।
সে পরিমাণ ইঞ্জিনিয়ারদের কর্ম-সংস্থান হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো: সার্টিফিকেট প্রাপ্ত কিন্তু কর্মে অদক্ষ।
তাই আপনি উপরে উল্লিখিত বা অনোল্লিখিত যেকোন একটি বিষয়ে। বিশেষভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
দেখবেন: আপনাকে পিছনে তাকাতে হবেনা। চাকরিসহ বিভিন্ন বিজনেস অপারচুনিটি আপনার দরজায় প্রতিনিয়ত স্বাগত স্বরে; ওয়েলকাম জানাবে।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে টিচারস.গভ। এই ওয়েবসাইটটিতে ক্লিক করুন।
সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার পর, যদি আরো কিছু জানার থাকে। তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে ফেলুন। আর অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে লেখাটি শেয়ার করবেন। আপনার ক্যারিয়ার হোক সুগঠিত। এই প্রত্যাশায়, এখনকার মতো বিদায় নিচ্ছি। আল-বিদা।।